ডারমাটোলজিতে লেজারের ব্যবহার
লেজারের বৈশিষ্ট্যগত দিক থকে খুবই ক্ষুদ্রাকৃতির আলোর
বিম তৈরি করে এবং সে আকৃতি ও দিক বজায় রাখতে পারে । তাই এ তীক্ষ্ণ আলোর ফোকাসের
কারণে লেজারের রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার বর্তমান সময়ে লেজারের ব্যবহার দেখা যায়
কম্পিউটার ডিভাইস, জ্যোতির্বিদ্যা এবং যোগাযোগ ক্ষেত্র, চিকিৎসাশাস্ত্র, সার্জারি,
রবোটিক্স, কাটিং ইন্ডাস্ট্রিসহ প্রায় সকল বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে লেজার টেকনোলজির
ব্যবহার এবং লেজার ডিভাইসের অবস্থান
লক্ষ্য করা যায় । চিকিৎসাশাস্ত্রে সার্জিকাল অপারেশনে লেজার ব্যবহার হয়ে আসছে ।
স্কিন লেজার সার্জারিতে ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু ধরণের
লেজার রয়েছে । কার্বন ডাই অক্সাইড এবং আর্গনের কন্টিনিউয়াস ওয়েভ লেজারের মত
পূর্বতন লেজার টেকনোলজিগুলো বহুলাংশে প্রতিস্থাপিত হয়ে গেছে কোয়াসি-কন্টিনিউয়াস
লেজার এবং পালসড লেজার সিস্টেমের মাধ্যমে ।
লেজার লাইটের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পিক, পালস সময়কাল এবং লক্ষ্য
টিস্যু কিভাবে লেজার শোষণ করবে তার মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরণের লেজারের চিকিৎসাগত
প্রয়োগ নির্ধারিত হয় ।
Laser type
|
Laser source
|
Wavelength peaks
|
CW: emit a constant beam of light
with long exposure durations
|
10,600 nm
|
|
|
488/514 nm
|
|
Quasi-CW: shutter the CW beam into
short segments, producing interrupted emissions of constant laser energy
|
532 nm
|
|
|
Copper bromide/vapour
|
510/578 nm
|
|
Argon-pumped tunable dye (APTD)
|
577/585 nm
|
|
Krypton
|
568 nm
|
Pulsed*: emit high-energy laser
light in ultrashort pulse durations with relatively long intervening time
periods between each pulse
|
Pulsed dye laser (PDL)
|
585-595 nm
|
|
694 nm
|
|
|
755 nm
|
|
|
1064 nm
|
|
|
2940 nm
|
|
|
10,600 nm
|
*পালসড লেজার সিস্টেমগুলি হয় লং পালসড (পিডিএল) যার পালস
সময়কাল ৪৫০ মাইক্রোসেকেন্ড থেকে ৪০ মিলিসেকেন্ড এর মধ্যে, না হয় সর্ট পালসড (৫-১০০
ন্যানোসেকেন্ড) যেমন কোয়ালিটি সুইচড লেজার (কিউএস)
ত্বকের চিকিৎসায় লেজারের ব্যবহার
ভাস্কুলার লেসিওন
পালসড ডাই লেজারের অধিকতর সাফল্য হার এবং সর্বনিম্ন ঝুঁকির কারণে একে পছন্দের লেজার হিসেবে গণ্য করা হয় । পালসড ডাই লেজারের রয়েছে বড় স্পট সাইজ (৫-১০ মিমি.) বড় লেসিওন গুলোর দ্রুত চিকিৎসা করতে দেয় । পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হিসেবে দেখা যায় অপারেশন পরবর্তী কালশিটে যা ১-২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ি হতে পারে এবং অস্থায়ী পিগমেন্টারি পরিবর্তন । টেক্সচারাল পরিবর্তন, ক্ষত এবং কালশিটে কদাচিৎ দেখা যায় ।
সুপারফিশিয়াল ভাস্কুলার হেমানজিওমাস, পাইওজেনিকগ্রানুলোমাস, বিকৃতি (পোর্ট-ওয়াইন স্টেইনস), ফেসিয়াল টেলানজিয়েনকটেসেস, সিভাটের পইকিলোডেরমা এবং ক্যাপসই সারকমার সহ বিভিন্নি ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসায় লেজার সফল ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে । এসব চিকিৎসায় যেসব লেজার ব্যবহার করা হয়েছে তারা হলো আর্গন, কপার ব্রোমাইড, কপার ভেপর, কেটিপি, এপিটিডি, ক্রিপ্টন, পালসড ডাই লেজার এবং Nd:YAG । আর্গন লেজার উচ্চতাপজনিত ক্ষতি এবং ক্ষত তৈরি করতে তাই এর বর্তমানে বহুলাংশে এটা ইয়েলো-লাইট কোয়াসি-সিডব্লিউ আর পালসড লেজার থেরাপি ব্যবহার করা হয় ।
ভি-বিমের বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে বেশি পরিমাণ শক্তি বেশি সময় ধরে লক্ষ্য ব্লাড ভেসেলে কেন্দ্রীভূত করে রাখা যায়, যার ফলে আরও অবিচল ব্লাড ভেসেল ড্যামাজ করা সম্ভব । পূর্বের পালস ডাই লেজারের চেয়ে এতে অনেক কম পারপিউরা দেখা যায় । এছাড়া ডাইনামিক কুলিং আরও স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদভাবে চিকিৎসা নিশ্চিত করে ।
প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা শুরু করা সব সময়ই বেশি কার্যকর হয় । ৮-১০ বার ট্রিটমেন্টের পর সাধারণত গরে ৮০ ভাগ দাগ চলে যায় । যদি লেসিওন আবার দেখা দেয় তবে আরও ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন ।
কোয়াসি লেজার
ট্রিটমেন্টেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় কিন্তু এতে দাগ এবং টেক্সচুরাল পরিবর্তন দেখা
যায় । আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে এরিথিমা, আয়ডিমা এবং ট্রান্সিয়েন্ট ক্রাস্টিং
অন্যতম ।
পিগমেন্টেড
লেসিওন এবং ট্যাটু
কার্যকরীভাবে
পিগমেন্টেড লেসিওন এর মেলানিন-স্পেসিফিক মুছে ফেলতে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কিউএস লেজার
সিস্টেম ব্যবহার করা যায় । চিকিৎসাযোগ্য পিগমেন্টেড লেসিওনগুলো হচ্ছে ছুলি, জন্মগত
দাগ ইত্যাদি । সর্ট পালসড লেজার মেলানোসমে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে লেসিওনের
কার্যকরী চিকিৎসা করা হয় । লেজার ট্রিটমেন্টের কার্যকারিতা নির্ভর করে মেলানিনের
গভীরতা এবং লেসিওনের রঙের উপর এবং অনেকটাই অনিশ্চিত । সুপারফিশিয়াল পিগমেন্ট এর
জন্য ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার বেশ কার্যকরী এবং গভীর পিগমেন্টের জন্য দীর্ঘ
তরঙ্গদৈর্ঘ্যের লেজার যা টিস্যুর গভীরে প্রবেশ করতে পারে । গাঢ় গায়ের রঙের রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন কারণ স্থায়ী
হাইপোপিগমেন্টেশন এবং ডিপিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে । এছাড়া সফলভাবে চিকিৎসাকৃত
লেসিওন আবার ফিরে আসতে পারে ।
ট্যাটুর
চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশেষ ট্যাটু পিগমেন্টগুলো ধ্বংস করার জন্য কিউএস লেজার সিস্টেম
কার্যকরী । ট্যাটুর রঙ, গভীরতা এবং
রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যর উপর নির্ভর করে লেজার বেছে নিতে হয় । সব রঙের মধ্যে হলুদ,
কমলা এবং সবুজ রঙ মুছে ফেলা সবচেয়ে কঠিন ।
• কালোঃ কিউএস রুবি, আলেক্সানড্রাইট অথবা Nd:YAG
• নীল এবং সবুজঃ কিউএস রুবি, আলেক্সানড্রাইট
• হলুল, কমলা এবং লালঃ QS Nd:YAG অথবা পিএলডি
হেয়ার রিমুভাল
অবাঞ্ছিত চুল অপসারণ এবং হাইপারট্রাইকোসিস
অথবা হারসুটিজম এর জন্য লেজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে । শরীরের বিশেষ বিশেষ অংশের
উপর নির্ভর করে বেশ কয়েকটি ট্রিটমেন্ট সাইকেলের প্রয়োজন হতে পারে এবং তার উপর
নির্ভর করেই প্রত্যেক সাইকেলের মধ্যবর্তী সময়ও নির্ধারণ করা হয় । লেজার চিকিৎসা
ইলেক্ট্রোলাইসিসের চেয়ে অনেক কম বেদনাদায়ক এবং অনেক বেশি দ্রুত । এক্ষেত্রে জটিলতা
খুবি বিরল কিন্তু সুপারফিশিয়াল বার্ন, পিগমেন্টারি পরিবর্তন এবং ক্ষতও দেখা দিতে
পারে । শরীরের যে অংশে চিকিৎসা করা হয়েছে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কালো চুলের
বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে । চিকিৎসার পর বিশেষ বিশেষ অংশে ঘামের বৃদ্ধি এবং হ্রাস
উভয়ই লক্ষ্য করা গেছে ।
লং পালসড রুবি এবং আলেক্সানড্রাইট লেজার,
ডাইওড (৮১০ ন্যানোমিটার), মিলিসেকেন্ড Nd:YAG এবং নন-লেজার ইনটেনসড পালসড লাইট হচ্ছে
উপযুক্ত ডিভাইস ।
মুখের বলিরেখা, ক্ষত এবং সান ড্যামেজ
ফেসিয়াল রিসারফেসিং এর ক্ষেত্রে উচ্চ শক্তি
সম্পন্ন, পালসড এবং স্ক্যানড লেজার ব্যবহার করা হয় ।
সান ড্যামেজ, মুখের বলি রেখা, ব্রণের ক্ষত
কমানো এবং দূর করার জন্য পালসড কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এরবিয়ামঃওয়াইএজি লেজার
সফলার সাথে ব্যবহার হয়ে আসছে । ফেসিয়াল ট্রান্সফরমেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সব
সিস্টেম গুলোর মধ্যে উচ্চ শক্তি সম্পন্ন, পালসড এবং স্ক্যানড কার্বন ডাই অক্সাইড
লেজারকে সবচেয়ে কার্যকরী হিসেবে বিবেচনা করা হয় । সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইড
ট্রিটমেন্ট নেয়া রোগীদের মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগ উন্নতি লক্ষ্য করা যায় । অপারেশন
পরবর্তী নমনীয়তা, লালচে ভাব, ফুলে যাওয়া এবং দাগ হচ্ছে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ।
লালচে ভাব এবং নমনীয়তা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে তবে ট্রিটমেন্ট নেয়া
অংশে আবার নতুন চামড়া তৈরির পর অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যায় । গাঢ় রঙের রোগীর
ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কারণ দীর্ঘ মেয়াদে পিগমেন্টেশনে নষ্ট
অথবা পরিবর্তনশীল পিগমেন্টেশন দেখা যেতে পারে ।
কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এবিয়ামঃওয়াইএজি’তে
একই রকমের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় । পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সেরে উঠতে দীর্ঘ
সময় লাগা সত্ত্বেও যদি ঠিক মত ব্যবহার করলে এ থেকে চমৎকার ফলাফল পাওয়া সম্ভব ।
কেলয়েড এবং হাইপারট্রফিক স্কারস
কেলয়েড এবং
হাইপারট্রফিক স্কার খুব সহজে মুছে ফেলা যায় না এবং প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতি সব সময়
কার্যকরী হয় না । প্রথাগত সার্জারির বিকল্প ব্যাবস্থা হিসবে ভেপরাইজিং লেজার (
কার্বন ডাই অক্সাইড এবং এরবিয়ামঃওয়াইএজি) অধিক সফল । সম্প্রতি কেলয়েড এবং
হাইপারট্রফিক স্কারের চিকিৎসায় পিডিএল ব্যবহার করা হয়েছে । এর জন্য বেশ কয়েকটি
ট্রিটমেন্ট সেসনের প্রয়োজন হতে পারে অথবা কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে ইন্ট্রালেসিওন
ইঞ্জেকশন ব্যবহার করা হয় ।
লেজার নিরাপত্তা
লেজার
সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে যেসব সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা নেয়া প্রয়োজনঃ
• ব্যক্তি বিশেষের পূর্ণ প্রশিক্ষণ
• ক্লিনিক স্টাফ এবং রোগীর চোখের
সুরক্ষা নিশ্চিত করা
• প্রসিডিউর রুমের বাইরে
সতর্কবার্তা স্থাপন
• অপ্রতিফলনশীল যন্ত্রের ব্যবহার
• দাহ্য বস্তুর ব্যবহার থেকে বিরত
থাকা ।
লেজারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
• কালশিটে, ক্রাস্টিং, লালভাব এবং অস্থায়ী ব্যাথা
।
• পিগমেন্টে পরিবর্তন ( বাদামি এবং
সাদা দাগ ), যা কিনা স্থায়ী হতে পারে ।
• ক্ষত
চিকিৎসাশাস্ত্রের
বহু ক্ষেত্রে লেজারের ব্যবহার হয় । কিন্তু এখনো অনেক অবস্থা আছে যার চিকিৎসা
লেজারের ব্যবহারেও সম্ভব নয় । বস্তুত লেজার বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার এবং
কার্যকরী মেডিক্যাল টুল হওয়া সত্ত্বেও সকল কিছুর প্রতিকার করতে পারে না । এখনো
লেজার নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন, এর সম্ভাব্য ব্যবহার যাচাই করছেন এবং দিন দিন
ডার্মাটোলজিতে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । শেষ পর্যন্ত, বিজ্ঞানের এই বিস্ময়
অল্পদিনের আবিষ্কার হলেও মানবকল্যাণে এর ব্যবহারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ।
No comments:
Post a Comment