Wednesday 12 October 2016


উদ্ভাবন নিয়ে একটি গল্প: লেজার


লেজার একটি আক্ষরিক নাম। ইংরেজি অক্ষর LASER এর L হল Light, A হল Amplification, S হল Stimulated, E হল Emission, R হল Radiation; LASER এর পূর্ণ শব্দটি হল Light Amplification by Stimulated Emission Radiation. অর্থাৎ উত্তেজিত বিকিরণের সাহায্যে আলোক বিবর্ধন। সাধারন আলোতে বিভিন্ন মাপের তরঙ্গ থাকে। একই বর্ণের আলোতে একই মাপের তরঙ্গ থাকলেও তারা বিভিন্ন তলে চলে। কিন্ত লেজারে সব তরঙ্গই হয় একই মাপের এবং তারা চলে একই তলে অর্থাৎ লেজার রশ্মি সংসক্ত। এ রশ্মি অত্যন্ত ঘন সংবদ্ধ একমুখী বলে তা অনেক পথ অতিক্রম করতে পারে এবং এরা মাত্র কয়েক মাইক্রন (১ মাইক্রন = ১০-৩ মি. মি.) চওড়া। এজন্য এতে প্রচণ্ড তাপশক্তি সঞ্চার করা সম্ভব হয় এবং তাপমাত্রা সূর্যের ওপরকার তাপমাত্রাও বেশি হয়। ফলে লেজার রশ্মি দিয়ে মানুষের একটা চুলকেও ছিদ্র করা সম্ভব। লেজার কোন একক ব্যক্তির প্রচেষ্টার ফলাফল নয়, বরং বহু অগ্রগামী অপটিক্স এবং ফটোনিক্স বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর প্রচেষ্টার সমন্বয় ।



লেজারের ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যায় ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক তার ল অফ রেডিয়েশন প্রকাশ করেন ।তার এই তত্ত্ব পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের দিক বদলে দেয় এবং আলবার্ট আইনস্টাইনকে অনুপ্রানিত করে এবং তিনি ১৯০৫ সালে ফটোইলেকট্রিক-ইফেক্টের উপর এক্তি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন যে আলোও শক্তি গুচ্ছ আকারে বহন করে । এরপর ১৯১৭ সালে আর বিস্তৃত আকারে তিনি মেজার এবং লেজারের মূলনীতিগুলো প্রকাশ করেন । যদিও বিজ্ঞানীদের আরও ৩০ বছর লাগে আইনস্টাইনের তত্ত্বকে প্রমাণ করতে ।
উদ্ভাবন নিয়ে একটি গল্প: লেজার
লেজার একটি আক্ষরিক নাম। ইংরেজি অক্ষর LASER এর L হল Light, A হল Amplification, S হল Stimulated, E হল Emission, R হল Radiation; LASER এর পূর্ণ শব্দটি হল Light Amplification by Stimulated Emission Radiation. অর্থাৎ উত্তেজিত বিকিরণের সাহায্যে আলোক বিবর্ধন। সাধারন আলোতে বিভিন্ন মাপের তরঙ্গ থাকে। একই বর্ণের আলোতে একই মাপের তরঙ্গ থাকলেও তারা বিভিন্ন তলে চলে। কিন্ত লেজারে সব তরঙ্গই হয় একই মাপের এবং তারা চলে একই তলে অর্থাৎ লেজার রশ্মি সংসক্ত। এ রশ্মি অত্যন্ত ঘন সংবদ্ধ একমুখী বলে তা অনেক পথ অতিক্রম করতে পারে এবং এরা মাত্র কয়েক মাইক্রন (১ মাইক্রন = ১০-৩ মি. মি.) চওড়া। এজন্য এতে প্রচণ্ড তাপশক্তি সঞ্চার করা সম্ভব হয় এবং তাপমাত্রা সূর্যের ওপরকার তাপমাত্রাও বেশি হয়। ফলে লেজার রশ্মি দিয়ে মানুষের একটা চুলকেও ছিদ্র করা সম্ভব। লেজার কোন একক ব্যক্তির প্রচেষ্টার ফলাফল নয়, বরং বহু অগ্রগামী অপটিক্স এবং ফটোনিক্স বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর প্রচেষ্টার সমন্বয় ।
লেজারের ইতিহাস খুঁজতে গেলে দেখা যায় ১৯০০ সালে ম্যাক্স প্লাঙ্ক তার ল অফ রেডিয়েশন প্রকাশ করেন ।তার এই তত্ত্ব পরবর্তীতে পদার্থবিজ্ঞান ইতিহাসের দিক বদলে দেয় এবং আলবার্ট আইনস্টাইনকে অনুপ্রানিত করে এবং তিনি ১৯০৫ সালে ফটোইলেকট্রিক-ইফেক্টের উপর এক্তি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যেখানে তিনি প্রস্তাব করেন যে আলোও শক্তি গুচ্ছ আকারে বহন করে । এরপর ১৯১৭ সালে আর বিস্তৃত আকারে তিনি মেজার এবং লেজারের মূলনীতিগুলো প্রকাশ করেন । যদিও বিজ্ঞানীদের আরও ৩০ বছর লাগে আইনস্টাইনের তত্ত্বকে প্রমাণ করতে ।
১৯৫০’এর দশকে বিজ্ঞানীরা এ তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করেন । কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির চার্লস টাউনেস এবং লেবেদেভ ল্যাবরেটরিসের অ্যালেক্সান্ডার প্রখরভ ও নিকোলাই বাসোভ এর মদ্ধে উল্লেখযোগ্য । ১৯৫৩ সালে টাউনেস প্রথম মেজার (maser; microwave amplification by stimulated emission of radiation) তৈরি করেন ।
১৯৬০ সালের ১৬ই মে’তে হিউজেস ল্যাবরেটরিসে থিওডোর মাইম্যান সিনথেটিক রুবি ব্যবহার করে সর্বপ্রথম কার্যকরী লেজার পরিচালনা করেন । এরপর মাইম্যান ফিজিকাল রিভিউয়ে তার আবিষ্কার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধ পাঠান কিন্তু তা সম্পাদকদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয় । নিজের কাজ দ্রুত প্রকাশের লক্ষে মাইম্যান তার প্রবন্ধ নেচারে জমা দেন যা একই বছরের আগস্টে প্রকাশিত হয় । তার এই প্রকাশনার সাথে সাথে হিউজেস ল্যাবরেটরিও জনসমক্ষে কার্যকরী লেজারের ঘোষণা দেয় ।
মানবদেহের চিকিৎসার জন্য সর্বপ্রথম লেজার ব্যবহার করেন কলম্বিয়ার ইন্সটিটিউট অফ অপথ্যালমলজির ড. চার্লস জে. ক্যাম্পবেল । রেটিনাল টিউমার ধ্বংসের জন্য একটি আমেরিকান অপটিক্যাল রুবি লেজার ব্যবহার করা হয় ।
১৯৬৩ সালে ড. লেনন গোল্ডম্যান রুবি লেজার কাজে লাগিয়ে চর্ম চিকিৎসায় লেজারের ব্যবহারের প্রবর্তন করেন । পরবর্তী দুই দশকে আর্গন এবং CW কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) উন্নয়নের সাথে সাথে ত্বক সংক্রান্ত চিকিৎসায় লেজার কেন্দ্রীয় ভুমিকা পালন করে এবং ত্বক সংক্রান্ত লেজারের গবেষণাও বৃদ্ধি পায় ।
১৯৮০ দশকে অ্যান্ডারসন এবং পারিস এর সিলেক্টিভ ফটোথার্মলাইসিস তত্ত্বের সাথে কিউটেনাস লেজার সার্জারিতে বিপ্লব দেখা যায় । ৭০ এর দশকে লেজার টেকনোলজির ব্যাপক উন্নতির কারণে কিউটেনাস লেজার সার্জারি পৌঁছে যায় এমন একটি অবস্থানে যে একে বহু জন্মগত বা পরবর্তী কিউটেনাস অবস্থার একটি প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে বিবেচিত হয় ।
আর বিগত দশকে লেজার টেকনোলজির ক্রমাগত উন্নতির কারণে বহু কিউটেনাস সমস্যা, জন্মগত ত্রুতি, ভাস্কুলার ও পিগমেন্টেড লেসিওন, ট্যাটু, ক্ষত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত চুল এর সফল চিকিৎসা সফলভাবে করা সম্ভব হয় ।
শব্দসংক্ষেপ সমূহ
· APTD: Argon-pumped
               tunable dye 
· CO2 : Carbondioxide 
· CW : Continuouswave 
· FDA : Foodand Drug
               Administration 
· IPL : Intensepulsed light 
· KTP : Potassiumtitanyl phosphate 
· LP : Long-pulsed 
· Nd : Neodymium 
· PDL : Pulseddye laser 
· PDT : Photodynamictherapy 
· QS : Quality-switched 
· YAG : Yttrium-aluminum-garnet 
লেজার নীতিসমূহ
লেজার শক্তির তত্ত্বীয় কর্মপদ্ধতির ভিত্তি হচ্ছে লেজার আলোর অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং লেজার-টিস্যুর জটিল মিথস্ক্রিয়া । আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যে, কিউটেনাস লক্ষ্যগুলিতে লেজার শক্তির বিশেষ শোষণ অর্জন করা সম্ভব । লেজার লাইটকে ক্ষুদ্র বিন্দুতে ফোকাস করে নির্ভুলভাবে টিস্যু ধ্বংস করা সম্ভব । ত্বকে যখন লেজার প্রয়োগ করা হয়, তখন আলো হয়ত শোষিত, প্রতিফলিত, পরিবাহিত অথবা চারদিকে ছড়িয়ে পরবে । ত্বকে একবার লেজার শক্তি শোষিত হলে তিনটি মৌলিক প্রভাব পরতে পারেঃ ফটোথার্মাল, ফটোকেমিক্যাল অথবা ফটোমেকানিক্যাল ইফেক্ট ।

ত্বকে লেজার শক্তির অনুপ্রবেশের গভীরতা নির্ভর করে শোষণ এবং চারদিকে ছড়িয়ে পরার উপর । বহিস্ত্বকে লেজার ছড়িয়ে পড়ে সবচেয়ে কম এবং অন্তস্ত্বকে সবচেয়ে বেশি । সাধারণত লেজারের অনুপ্রবেশের গভীরতা তরঙ্গদৈর্ঘ্য সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় । তাই এই নীতিগুলির ভিত্তিতে লেজার স্থিতিমাপ (তরঙ্গদৈর্ঘ্য, পালস সময় এবং ফ্লুয়েন্স) কিউটেনাস চিকিৎসার প্রয়োজন মত করে নেয়া যায় যাতে সর্বনিম্ন কলাটেরাল থার্মাল ড্যামেজ এবং সর্বোচ্চ লক্ষ্য ধ্বংস করা যায় । যেহেতু কিউটেনাস লেজারের বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য, পালস সময়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন চিকিৎসাগত উপযোগিতা রয়েছে তাই লক্ষ্য ক্রমোফরের শোষণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে লেজার বেছে নেয়া উচিত ।
ভাসকুলার নির্দিষ্ট লেজার
ভাস্কুলার নির্দিষ্ট লেজার সিস্টেম লক্ষ্য করে ইন্ট্রাভাস্কুলার অক্সিহিমগ্লবিনকে যাতে জন্মগত অথবা অর্জিত ভাস্কুলার লেসিওন ধ্বংস করা যায় । ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসার জন্য যেসব লেজার ব্যবহার করা হয়ঃ আর্গন (৪৮৮-৫১এনএম), এপিটিডি (৫৭৭-৫৮৫ এনএম), কেটিপি (৫৩২ এনএম), ক্রিপ্টন (৫৬৮ এনএম), কপার ভেপর/ব্রোমাইড (৫৭৮ এনএম), পিডিএল (৫৮৫-৫৯৫ এনএম), এনডিঃ ওয়াইএজি (৫৩২ এবং ১০৬৪ এনএম)
সিলেক্টিভ ফটোথার্মোলাইসিসের উপর ভিত্তি করে ফ্ল্যাশল্যাম্প-পাম্পড পিডিএল হচ্ছে সর্বপ্রথম লেজার যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয় ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসার জন্য । বিভিন্ন ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসার ক্ষেত্রে পিডিএল বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে এবং উচ্চতর ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতা ও কম ঝুঁকির কারণে তা জন্মগত এবং অর্জিত ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসার ক্ষেত্রে পছন্দের লেজার হিসেবে গণ্য করা হয় । এই লেজারটি বিভিন্ন ভাস্কুলার লেসিওন চিকিৎসায় সফলভাবে ব্যবহার করা হয়, যেমনঃ পোর্ট-ওয়াইন দাগ, মুখের টেলানজিয়েকটাসেস, হেমাঞ্জিওমাস, পাইওজেনিক গ্রাউলমাস , কাপোসিস সারকোমা ।

No comments:

Post a Comment