প্রাপ্ত বয়স্ক ব্রণঃ কারণ ও সমাধান
ব্রণ হচ্ছে মুখের,
বুকের এবং পিঠের হেয়ার ফলিকলের এমন একটি স্কিন কন্ডিশন যা সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে
দেখা যায় । যদিও কোন কোন কিশোর/কিশোরী এ অবস্থা উৎরে যায় তবু এটি মোটেও অস্বাভাবিক
নয় যে কেউ কেউ তার ২০-৩০ বছর বয়েসে এমনকি ৫০ বছর বয়েসেও ব্রণের সমস্যায় ভুগতে পারেন
।
চামড়ায় ব্রণের দেখা পাওয়া যায়ঃ
- অকলুডেড
পোরস, ব্ল্যাকহেড অথবা হোয়াইটহেড নামে পরিচিত
- রেড
বাম্পস, পিম্পল নামে পরিচিত
- ফুসকুড়ি
(পুঁজ থাকে)
- সিস্ট
(গভীর ব্রণ, ফোঁড়া)
ব্রণের কারণ
প্রকৃতপক্ষে ব্রণের
একক কোন কারণ নেই । বেশিরভাগ সময় যখন হেয়ার ফলিকলের সাথে যুক্ত সিবেসাস (অয়েল)
গ্লান্ড স্টিমুলেট হয় তখন ব্রণের উৎপত্তি হয়ে থাকে । এটি বয়ঃসন্ধিকালে অথবা
হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে । সিবিয়াম (অয়েল) একটি প্রাকৃতিক পদার্থ যা
ত্বককে পিচ্ছিল রাখে এবং রক্ষা করে । তেল নিঃসরণের বৃদ্ধির ফলে স্কিন সেল এমন ভাবে
পরিণত হয় যাতে ফলিকুলার পোর বন্ধ হয়ে যায় । এর ফলে হোয়াইটহেড দেখা দিতে পারে যা
একটু পুরু চামড়ার আস্তরণ দিয়ে ঢাকা থাকে, আর গাড় অংশ হিসেবে ব্ল্যাকহেড দেখা দিতে
পারে । এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া হেয়ার ফলিকল ধীরে ধীরে বড় হয় এবং ফুলে উঠে । ফলিকল
ফুলে যাওয়ার কারণে দেয়াল ফেটে যায়, যার ফলে বিরক্তিকর পদার্থ এবং সাধারণ স্কিন
ব্যাকটেরিয়া চামড়ার গভীরে প্রবেশ করতে পারে । শেষ পর্যন্ত প্রদাহ তৈরি হয় । চামড়ার
পৃষ্ঠের কাছে প্রদাহ হলে ফুসকুড়ি তৈরি হয়, গভীর প্রদাহের ফলে পিম্পল, আর প্রদাহ
যদি আরও গভীর হয় তবে সিস্ট তৈরি হয় ।
হরমোনাল পরিবর্তনের
আরেকটি কারণ হচ্ছে মানসিক চাপ । মানসিক চাপের ফলে অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ড করটিসল
নিঃসরণ করে যাতে শরীর চাপের সাথে মোকাবিলা করতে পারে । কিন্তু এর সাথে সাথে
সামান্য পরিমাণে টেস্টোসটেরন নিঃসরিত হয়, যা তেল গ্রন্থিগুলো থেকে অধিক পরিমাণে
নিঃসরণ ঘটায় । এটি হচ্ছে ব্রেকআউটের মূল কারণ । তাছাড়া বায়ু দূষণ প্রভাবক হিসেবে
কাজ করে । বিশেষ কিছু খাবার প্রভাব ফেলতেও পারে । কিন্তু নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখন
পাওয়া যায় নি । ভাজাপোড়া, জাঙ্ক ফুড এবং তৈলাক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় তবে এরা ব্রণ তৈরি করে না বা ব্রণের
অবস্থা আরও খারাপ করায় না । যদিও
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ মাত্রার কার্বহাইড্রেট, দুধ এবং
বিশুদ্ধ চকলেট ব্রণের অবস্থার অবনতি ঘটায় । তবে এই গবেষণাগুলো এখনও পুরোপুরি
প্রমাণিত নয়
সমাধান
ব্রণ চিকিৎসায় স্যালিসিলিক অ্যাসিডকে অগ্রগণ্য হিসেবে দেখা
হয় । একে বেটা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিডও বলা হয় । মৃদুভাবে পোরগুলো পরিস্কার করার
মাধ্যমে স্যালিসিলিক কাজ করে । একে পুরো মুখেই ব্যবহার করা যায় ।
বেঞ্জয়ল পেরক্সাইড মূলত ব্রণ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে কাজ করে
সাথে সাথে পোরগুলিও পরিস্কার করে । এটি মৃদুভাবে কাজ করে না, চামড়া শুষ্ক করে ফেলে
এবং অতিরিক্ত ব্যবহারে বিরক্তির কারণও হতে পারে । উত্তম উপায় হচ্ছে ত্বকের বিশেষ
অংশে ব্যবহার করা ।
সালফার চামড়া থেকে তেল বের করে নেয় এবং শুষ্ককারি হিসেবে
কাজ করে । বিশেষ অংশে বেশ কার্যকরী ।
গ্লাইকলিক অ্যাসিড হচ্ছে একধরনের আলফা-হাইড্রক্সি
অ্যাসিড এবং তা ব্রণ ও বলিরেখা উভয়কে লক্ষ্য করে কাজ করতে পারে । পৃষ্ঠ হতে মৃত
কোষ অপসারণের মাধ্যমে এটি বলিরেখা ও ব্রণ উভরের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে ।
চামড়ার টেক্সচারের উন্নতি ঘটায় এবং ব্রেকআউটও পরিস্কার করে ।
লেজার
বিভিন্ন
ধরনের ব্রণের উপর ভিত্তি করে এদের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন লেজার কাজ করে । বাইরের
পৃষ্ঠে কোন রকমের ক্ষতি না করে লেজার লাইট ব্রণের গভীর স্তরে গিয়ে চিকিৎসা করে
থাকে । প্রকৃত অর্থে কিছু লেজার পরফাইরিনস সিমুলেশনের মাধ্যমে ব্রণের মধ্যে থাকা
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে । ডায়োড লেজারের মত অন্যান্য লেজার হেয়ার ফলিকলের মধ্যে
থাকা সিবেসাস অথবা অয়েল গ্লান্ড ধ্বংসের মাধ্যমে কাজ করে । যেহেতু অতিরিক্ত তেল
নিঃসরণের কারণে ব্রণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয় তাই এই চিকিৎসার কারণে তেল নিঃসরণ কমে যায়
এবং ভবিষ্যতের ব্রেকআউট না হওয়া নিশ্চিত হয় । বিভিন্ন ধরনের ব্রণ চিকিৎসার লেজার
ক্ষত ও চামড়ার অবস্থার উন্নতিও ঘটায় । কিছু লেজার ট্রিটমেন্ট কোলাজেন ও ইলাস্টিন
উৎপাদন করে মসৃণ ও তারুণ্যদীপ্ত ত্বক নিশ্চিত করে ।
চিকিৎসার
সেসন সংখ্যা ও ফ্রিকোয়েন্সি নির্ভর করে ব্রণের ধরণ, অবস্থা ও রোগীর রেসপন্সের উপর
। যেসব লেজার সাধারণত ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছেঃ ডায়োড, হাই ইন্টেনসিটি লেজার,
ইনফ্রারেড, পালসড লাইট এবং হিট এনার্জি ।
লেজার
ট্রিটমেন্ট মৃদু ও মডারেট ব্রণের ক্ষেত্রে কার্যকরী হিসেবে গণ্য করা হয় । এটি ব্রণ
ও ব্রণের লক্ষণ নিরসনে কাজ করলেও সব সময় হয়তো শতভাগ কার্যকরী হয় । প্রতিটি রোগী
ভিন্ন এবং তাদের চিকিৎসার উপায়ও বিভিন্ন ।
No comments:
Post a Comment