Saturday 14 January 2017

চুল পড়া



অনেকেরই এমন ধারণা থাকে যে চুল পড়া শুধু মাত্র একটি পুরুষালি সমস্যা । যদিও শতকরা ৪০ ভাগের চেয়ে বেশী নারীরা চুল পড়ার কোন না কোন সমস্যায় আক্রান্ত হন । যা কিনা দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করতে পারে এবং আত্ম-বিশ্বাসকে প্রভাবিত করতে পারে । যেসব নারী চুল পড়ার কোন না কোন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জানা থাকা দরকার যে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সহজগিতায় চুলের এই সমস্যার সমাধান এবং চিকিৎসা করা সম্ভব ।
প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেকেরই গড়ে ৫০-১০০টি চুলে পড়ে যায় । সাধারণত শরীর এই হারানো চুল প্রতিস্থাপন করে ফেলে নতুন চুল দ্বারা । কিন্তু যখনি শরীর এই উৎপাদন কমিয়ে বা বন্ধ করে দেয় তখনি মাথায় চুলের সংখা কমে যেতে শুরু করে । কিছু সময় শরীর আপনা আপনি আবার চুলের বৃদ্ধি পুনরায় শুরু করে এবং কিছু সময় তা আর কখনই করে না ।


চুল পড়ার কারণসমূহ
চুল পড়ার অনেক চিহ্নিত কারণ রয়েছে । চুলের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য গুরুত্বপূর্ণ । সেক্ষেত্রে চুল পড়া একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অনেক সময় অকস্মাৎ চুল পড়া বৃদ্ধি পায়, সম্ভবত অসুস্থতার কারণে, খাবার, চিকিৎসা অথবা সন্তান জন্মদান ইত্যাদি কারণে ।
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যাকে ফিমেল-প্যাটার্ন বাল্ডনেস বলে । এর ফলে নতুন চুল গজান এবং বৃদ্ধি পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় । প্রায়শই এই অবস্থাকে অ্যান্ড্রজেনিক অ্যালোপেসিয়া নামে চিহ্নিত করা হয় । এই ধরণের চুল পড়ার প্রবণতা পুরুষ এবং নারী উভয়ের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের ঋতুস্রাবের সময় লক্ষিত হয় । এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ । সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ নারী এই সমস্যায় ভুগে থাকেন । দুর্ভাগ্যজনক হলেও অ্যান্ড্রজেনিক অ্যালোপেসিয়া এড়ানো অসম্ভব এবং এর কোন সম্পূর্ণ আরোগ্যের উপায় নেই ।
আরও একটি অবস্থা যার কারণে চুল পড়া বৃদ্ধি পায় তার নাম হলো অ্যালোপেসিয়া আরেটা । বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকেন যে এটি একটি অটোইমিউন ব্যাধি যখন শরীর তার নিজের চুলকেই বহিরাগত বস্তু ভেবে আক্রমণ করে । অনেক সময়য়ই স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হয়ে থাকেন । আর অ্যালোপেসিয়া আরেটা মাথার তালুতে মসৃণ ও বৃত্তাকার প্যাচ সৃষ্টি করে ।
সিকাট্রিসাল অ্যালোপেসিয়া একটি বিরল ব্যাধি যা স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দেয় । এটি আক্রান্ত ব্যক্তির হেয়ার ফলিসিল ধ্বংস করে ফেলে এবং সেখানে ক্ষতচিহ্ন সৃষ্টি করে । যার ফলে নতুন চুল সৃষ্টি ব্যঘাত ঘটে ।
অন্যান্য কারণ
হরমোনঃ নারীদের মধ্যে হরমোনের অস্থিরতা দেখা দেয় যেমন, গর্ভাবস্থায় চুল পড়া লক্ষ্য করা যায় । কিন্তু গর্ভাবস্থার পরেও এর রেশ থেকে যায় । ঋতুস্রাবও একটি হমোনাল অসাম্য তৈরি করে যার ফলে সাময়িক চুল পড়ার প্রবণতা দেখা দেয় ।
স্বাস্থ্যঃ কঠিন কোন রোগের যেমন, ডায়বেটিস অথবা লুপাসের লক্ষন হিসেবে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে । তাছাড়া ফাঙ্গাল ইনফেকসনের কারণেও চুল পড়ে থাকে । কেমোথেরাপি অথবা ব্লাড থিনারের হেয়ার ফলিসিলের ক্ষতি হয়ে থাকে ।
জীবনধারাঃ খুব টান টান করে চুল বাধা, পনিটেইল বা ক্যাপের ব্যবহারে চুল পড়ে যেতে পারে । খুবি কষ্টকর কোন ঘটনা, পরিস্থিতি বা পরিবেশের অভিজ্ঞতা চুলের ক্ষতি করতে পারে ।

চিকিৎসা
চুল পড়ার চিকিৎসার প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে চুল পড়ে যাওয়ার কারণ নির্ধারণ । একজন চিকিৎসক বা ডার্মাটোলজিস্ট রোগের উৎস নির্ণয় করে আপনার জন্য সঠিক চিকিৎসা প্রণয়ন করতে পারেন । স্বাস্থ্য অথবা জীবনধারার কোন কারণে সৃষ্ট চুল পড়ার সমস্যা সমাধান করা যায় । এক্ষেত্রে ক্ষতিকারক অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ বা যেসব ঔষধ চুল পড়া বৃদ্ধি করে তাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব । যদি এসব পরিবর্তনে কাজ না হয় তবে হেয়ার ফলিসিলে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে । এছাড়া হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট আরেকটি বিকল্প । যখন চিকিৎসায় কাজ না হতে থাকে তখন বিভিন্ন হেয়ার স্টাইল, উইগ, হেয়ার উইভস বা কৃত্রিম চুলের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চুল পড়ার অবস্থাকে কম দৃশ্যমান করা যায় ।
চুল অস্বাভাবিক হারে পড়তে থাকলে আপনার প্রথম করনীয় হচ্ছে আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া । যে কিনা চুল পড়ার প্রকৃত কারণ নির্ধারণ করতে পারবেন । তারপর চিকিৎসক অধিকতর ব্যবস্থাপনার জন্য একজন ডার্মাটোলজিস্টের কাছে রেফার করতে পারেন । চুল পড়ার চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে তথ্য এবং পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত । কারণ বহু বাজে চিকিৎসা এবং চিকিৎসা পণ্য রয়েছে যা খুবই ব্যয় সাপেক্ষ এবং অকাজের হয়ে থাকে ।

No comments:

Post a Comment