Wednesday 1 February 2017

ঠোঁটের লাইন এবং বলিরেখা

উপরের ঠোঁটের লাইন এবং বলিরেখাকে বলা হয় পেরিওরাল রিটিডস বা স্মোকারস লাইনস । এটি মুখের নিচের অংশের একটি প্রধান আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য । কিন্তু আপনার জেনে রাখা উচিত যে এই সমস্যা নিয়েই আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে না । এক্ষেত্রে একজন ডার্মাটোলজিস্ট আপনার প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশী সাহায্য করতে পারেন । যদিও প্রথমে আপনার জানা উচিত কি কারণে ঠোঁটের এই লাইন এবং বলিরেখা সৃষ্টি হচ্ছে । 
ঠোঁটের এমন বলিরেখার প্রাথমিক কারণ হচ্ছে সূর্যের আলো, সিগারেট এবং স্ট্র’র ব্যবহার । মুখের পার্শ্ববর্তী ত্বক সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিতে অনেক উন্মুক্ত থাকে এবং এর ফলে ত্বক পাতলা হয়ে যায় । সাথে সাথে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং কোলাজেন ফাইবার এর অধঃপতন ঘটে । ধূমপান এবং স্ট্র’রচুমুকের ফলে ঠোঁটের এমনসব বৈশিষ্ট্য তীব্রতর হয় ।
আপনার ঠোঁটের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া বার্ধক্যেরও একটি লক্ষণ । এরা ত্রিশের শুরু দিকে দৃশ্যমান হওয়া শুরু করে এবং পঞ্চাশের দিকে সম্পূর্ণরূপে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে । প্রথম জীবনে ঠোঁট তার পূর্ণ চেহারায় থাকে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ঠোঁটের নিম্নাবস্থিত পেশী পাতলা হয়ে যেতে শুরু করে এবং ঠোঁট সমতল হয়ে যায় । একসময় যে ঠোঁট পুরপুরি দৃশ্যমান ছিল তা পরবর্তীতে আরও অনেক বেশী পাতলা এবং কিছুটা নুয়ে পরে । গবেষণায় দেখা গেছে যে সময়ের সাথে সাথে ঠোঁটের আয়তন প্রকৃতপক্ষে একই থাকে কিন্তু ঠোঁটের দুই কোণার মধ্যকার দূরত্ব বৃদ্ধি পায় এবং ফলস্বরূপ আয়তন আরও বেশী এলাকায় বিস্তার লাভ করে ।

সমস্যাজনক ঠোঁটের লাইন এবং বলিরেখার চিকিৎসা
মুখের পার্শ্ববর্তী পেশীর সংকোচনের মাধ্যমে ঠোঁটের ত্বকের ঘন ভাঁজ এবং বিস্ফোরণ কমানো সম্ভব । ফলস্বরূপ উপরের ঠোঁট আরও মসৃণ হয়, ঠোঁটের লাইনের আরও গভীর হয়ে বৃদ্ধিও হ্রাস পায় এবং ঠোঁট পূর্ণরূপে প্রকাশ পেতে পারে । ঠোঁটের মার্জিনে অল্প পরিমাণে নিউরোমডুলেটরের মত সুপারফিসিয়াল ইঞ্জেক্সন দেয়ার মাধ্যমে এই কাজটি করা যায় । তাছাড়া মাইক্রোনিডেলিং, ফ্র্যাকসনাল হাই ইনটেনসিটি ফোকাসড রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এবং ফ্র্যাকসনাল লেজার রিসারফেসিং এর মত চিকিৎসার পদ্ধতির সাথে সাথে এটিও ব্যবহার করা যায় ।
মাইক্রনিডেলিং হচ্ছে ন্যূনতম আক্রমণাত্মক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে ত্বকে মাইক্রোস্কপিক ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমে কোলাজেন সিনথেসিসকে উদ্দীপ্ত করা হয় । সাধারণত টপিকাল নাম্বিং ক্রিম ব্যবহারের পর এই চিকিৎসা পদ্ধতি সহনশীল অবস্থায় থাকে । এটি মূলত কয়েক মাস ধরে পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে কার্যকর হয় । যার ফলে সুপারফিসিয়াল ফাইন লাইনগুলো অদৃশ্য হবার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় ।
ঠোঁটের লাইন দূর করতে ফ্র্যাকসনাল লেজার সারফেসিং বেশ কার্যকর । বেশ কয়েকটি পুনরাবৃত্তি সেসনের মাধ্যমে ফ্যাকসনাল নন-আবলেটিভ লেজার ব্যবহারের ফলে গভীর লাইনগুলোর বেশ উন্নতি হয় কিন্তু সুপারফিসিয়াল লাইনগুলোতে আরও জোরালো উন্নতি লক্ষ্য করা যায় । আর ত্বকের গভীর লাইনগুলোর চিকিৎসার জন্য ফ্র্যাকসনাল আবলেটিভ লেজারকে বেছে নেয়া হয় । এই পদ্ধতিগুলো কার্যকর করার সময় লোকাল বা টপিকাল ইনজেকশন অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হয় এবং আরোগ্যের জন্য কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ।
ঠোঁটের লাইন এবং বলিরেখা বা পেরিওরাল রিটিডস চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে । এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি এক সাথে ব্যবহার করা হয় কারণ এরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে । বেশীরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে নিউরোমডুলেটর ইনজেকশন সাহায্য করে থাকে । এর পাশাপাশি ঠোঁটের মার্জিনে সফট টিস্যু ফিলিং এজেন্ট ইঞ্জেকশন দেয়া হয় আর কিছু ক্ষেত্রে উপরের ঠোঁটেও তা দেয়া হয় । এছাড়া বলিরেখা, লাইন হ্রাস এবং টেক্সচারাল পরিবর্তনের জন্য মাইক্রোনিডেলিং বা লেজার ব্যবহার করা হয় । আর আরও বিস্তারিত মন্তব্য এবং আপনার ঠোঁটের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোত্তম চিকিৎসা কম্বিনেশন নির্ধারণের জন্য ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হন ।


No comments:

Post a Comment