ভিটিলিগো
হচ্ছে এমন একটি চর্মরোগ যা শরীরের উভয় দিকেই লক্ষ্য করা করা যায় । এটি ত্বকের প্রাকৃতিক রঙকে বিনষ্ট করে এবং
হালকা রঙের ত্বক সৃষ্টি করে । কেউ কেউ কিছু প্যাচের দেখা পান আবার কেউ কেউ নিজের
ত্বকের প্রকৃত রঙের অনেকটাই হারিয়ে ফেলেন । ভিটিলিগো ত্বকের একটি অটোইমিউন রোগ যা
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থাকে আক্রান্ত করে পিগমেন্ট ধ্বংস করা শুরু করে, ত্বকে
মেলানোসাইট গঠন করে, যার ফলে বিকৃত সাদা প্যাচ দেখা যায় । কোষের এমন ধংসের ফলে তা
মুকাস মেমব্রেন পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে এবং চোখ, মুখ, নাক, কান, এমনকি যৌনাঙ্গকেও
আক্রান্ত করতে পারে । এটি যেকোনো বয়স এবং বর্ণের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে , তবে
বেশীরভাগ রোগী এতে ২১ বছর বয়সের আগেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন ।
রোগ নির্ণয়
অধিকতর ক্ষতি
রোধ এবং আক্রান্ত স্থানের প্রকৃত রঙ ফিরিয়ে আনার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয় হচ্ছে প্রথম
পদক্ষেপ । শনাক্তকরণের পদ্ধতি মূলত ভিসুয়াল প্যাটার্ন এবং ডিপিগমেন্টেশন স্থানের
উপর নির্ভর করে । তাছাড়া পরিবারের ইতিহাস এবং আনুষঙ্গিক লক্ষণসমূহও গুরুত্বপূর্ণ ।
আপনার চিকিৎসক হয়ত সহজ কিছু পরীক্ষা করবেন । যদি লক্ষণসমূহের কারণে মনে হয় তবে
নিডল বায়োপসি করার প্রয়োজন হতে পারে । যাতে ভিটিলিগোর বিরক্তিকর অনুষঙ্গ যেমন,
থাইরয়েডের রোগ অথবা ভিটামিন ডি সল্পতা নির্ণয় করা যায় ।
দুই ধরণের ভিটিলিগো
রয়েছে- সবচেয়ে সাধারণটি সারা শরীরকেই আক্রান্ত করে । অন্যটি, যা সেগমেন্টাল হিসেবে
পরিচিত, যা শরীরের একটি অংশকেই আক্রান্ত করে । তাছাড়া ভিটিলিগোর একটি উপগোত্র
রয়েছে যা মার্জিনাল ভিটিলিগো নামে পরিচিত
। এটি স্ফীত সীমানা এবং বিচ্ছিন্ন ডিপিগমেন্টশন নিয়ে আবির্ভূত হয় । যখন শরীরের সব
পিগমেন্টেশন হারিয়ে যায়, তাকে আরেকটি উপগোত্রে রাখা হয় । একে ইউনিভার্সাল বলা হয়
এবং এটি খুব দুর্লভ একটি অবস্থা ।
লক্ষণ
বেশীরভাগ রোগীই চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হন যখন তাদের ত্বকে ফ্যাকাশে গোলাপি বা সাদা অঞ্চল আবির্ভূত হয় । তারা
প্রায়ই বলে থাকেন যে ত্বকের সাদা স্পটে তারা চুলকানি অনুভব করে থাকেন । এই
ভিটিলিগো স্পট কোন ব্যাথার সৃষ্টি করে না এবং বহুদিনেও তা হয়তো শরীরের আর কোথাও
ছড়িয়ে পরবে না ।
চিকিৎসা
ভিটিলিগো ছোঁয়াচে নয় । এটি প্রাণঘাতীও নয় । কিন্তু তা জীবন পরিবর্তনকারী হতে
পারে । রোগীদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলতে পারেন । তারা হয়তো আর বন্ধু
বান্ধবদের সাথে ঘোরাফেরা বন্ধ করে দিতে পারেন বা ভয়াবহ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে
পারেন । অনেকের ক্ষেত্রেই ভিটিলিগো আজীবনের বোঝা হয়ে পরতে পারে, তাই এর চিকিৎসার
জন্য সঠিক কৌশল নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বহুকাল ধরে ভিটিলিগোর চিকিৎসা
মৌলিক স্বাচ্ছন্দ্য ব্যবস্থা এবং কিছু টপিকাল অয়েনমেন্ট ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ
ছিল । কিন্তু বর্তমান গবেষণার অগ্রগতির কারণে নতুন চিকিৎসা এই রোগের ছড়িয়ে পরা রোধ
এবং প্রকৃত রঙ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সফল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে । ত্বকের প্রকৃত রঙ
ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এ চিকিৎসা এক বছর পর্যন্তও স্থায়ী হয় । যদিও সব ধরণের ত্বক
এই চিকিৎসার সাথে একভাবে সাড়া দেয় না বা একই সময়কালের জন্য স্থায়ী হয় না । ফলাফল
এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষকেই গুরুত্ব দেয়া হয় ।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশেষ কিছু সাপ্লিমেন্ট যেমন, সেলেনিয়াম বেশ
কার্যকর । যা আপনার ডার্মাটোলজিস্ট সুপারিশ করে থাকতে পারেন । সার্জিক্যাল
হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে । যেমন, স্কিন গ্রাফট এবং এমনকি আক্রান্ত সাদা অঞ্চলকে
ট্যাটু করেও তার আগের রঙে ফিরিয়ে আনা যায় । এক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্ট আপনার জন্য
সর্বোত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করে থাকেন ।
No comments:
Post a Comment