অস্বাভাবিক অথবা অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি হচ্ছে এমন একটি
অবস্থা যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় বলা হয় হেরসুটিসম । প্রত্যেক নারীরই মুখে এবং
শরীরে চুল থাকে, কিন্তু তা সাধারণত খুবই মিহি এবং হালকা রঙের হয়ে থাকে ।
হেরসুটিসমকে সনাক্ত করা হয় মুখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির
লক্ষণ দিয়ে । প্রাথমিকভাবে হেরসুটিসম শুধুমাত্র নারীদের মধ্যেই দেখা দেয়, কিন্তু
মাঝে মাঝে পুরুষদের মধ্যেও অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে । শুরুর দিকে
হেরসুট রোগীরা চিবুক অথবা বুকে কিছু ঘন চুলের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন । অবশেষে তা
সংখ্যায় আরও বৃদ্ধি পায় এবং উপরের ঠোঁট,
গাল, কুঁচকি, বুকের মাঝের অংশ এবং পেট আচ্ছাদিত করে ফেলে । এসব চুল ক্রমে ক্রমে
আরও পুরু ও ঘন হয়ে যেতে পারে । হেরসুটিসম সংশ্লিষ্ট আরও বৈশিষ্ট্যগুলি হচ্ছে ব্রণ,
ওজন বৃদ্ধি, ঋতুস্রাব চক্রে পরিবর্তন, গর্ভধারণে জটিলতা ইত্যাদি ।
অস্বাভাবিক অথবা অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধির কারণঃ
নারী হরমোনের আধিপত্যের কারণে নারীদের চুলের বৃদ্ধি
পুরুষের তুলনায় অনেকটাই আলাদা । শরীরে পুরুষ হরমোনের বৃদ্ধি নারী সুলভ
বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন, ঋতুস্রাব চক্র এবং গর্ভধারণ ক্ষমতা হ্রাস ঘটায় । এর ফলে
পুরুষালী বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন, হেরসুটিসম, ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ এবং কদাচিৎ কর্কশ কণ্ঠ হতে
পারে । নারীদের মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন নামক পুরুষ হরমোন নিম্নলিখিত পরিস্থিতে বৃদ্ধি
পেতে পারেঃ
·
পলিসিস্টিক
ওভারিয়ান রোগঃ এইটি হচ্ছে
হেরসুটিসমের সবচেয়ে সাধারণ কারণ । ডিম্বাশয়ে অনেক
ছোট সিস্টের উপস্থিতি দ্বারা একে চিহ্নিত করা
হয় ।
·
জন্মগত
অ্যাড্রিনাল
হাইপারপ্লাসিয়াঃ এটি একটি জন্মগত ব্যাধি যার কারণে হরমোন
সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের ঘাটতি দেয় এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে পুরুষ-মত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিকশিত
হয় । অবশ্য, এই গোলযোগের সূত্রপাত প্রাপ্তবয়স্কদের
মধ্যেও ঘটতে পারে, এবং এর বহিঃপ্রকাশ শুধুমাত্র হেরসুটিসমের
মাধ্যমে ঘটতে পারে ।
·
মেডিকেশনঃ মিনোক্সিডিল, ডায়াজোক্সাইড, কর্টিকস্টেরয়েড,
ফেনাইটয়েনের মত ওষুধের কারণে অস্বাভাবিক অথবা অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি দেখা দিতে
পারে । যদিও এর কারণে পুরুষালী বৈশিষ্ট্যসমূহের বিকাশ হয় না ।
·
ইডিওপ্যাথিকঃ হেরসুটিজমের যে বিশেষ ক্ষেত্রে
হরমোনের কোন পরিবর্তন দেখা দেয় না অথবা অনুসন্ধানে কোন অস্বাভাবিকতা দেখায় না তাকে
ইডিওপ্যাথিক হিসেবে অবিহিত করা হয় । এই উপ-বিভাগ
অ্যান্ড্রোজেনের স্বাভাবিক মাত্রার প্রতি অতি-সংবেদনশীলতা দেখায় ।
·
বিরল কারণসমুহঃ কিউজিং রোগ, অ্যাক্রোমেগালি, প্রোলাক্টিং
ক্ষরণের পিটুটারি টিউমার, ওভারিয়ান টিউমার ইত্যাদি । টিউমারগুলো সাধারণত
হেরসুটিসমের দ্রুত সুত্রপাতের মাধ্যমে বহিঃপ্রকাশ ঘটায় । পাশাপাশি ভিরিলাইজেশনের বৈশিষ্ট্যসমূহও
প্রকাশ পায় ।
অস্বাভাবিক অথবা অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধির চিকিৎসাঃ
বর্তমানে লেজার টেকনোলজির
উন্নতির কারণে হেরসুটিসম আর কোন দুঃস্বপ্ন নয় । তবে শুধুমাত্র লেজারের উপর নির্ভর
না করে নিজেকে একজন ডার্মাটলজিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উত্তম । অন্তর্নিহিত
কারণ এর চিকিত্সা শুধুমাত্র নতুন পুরু ঘন চুল গঠন হ্রাসে
সাহায্য করবে না বরং বিদ্যমান চুল বৃদ্ধি কমাতেও সাহায্য
করে । নিম্নলিখিত কারণসমূহের জন্য লেজার অধিক কার্যকরঃ
·
লেজার চিকিৎসায় শুধুমাত্র চুলে লক্ষ্য করে হয় বলে
পার্শ্ববর্তী ত্বকের ক্ষতি ন্যূনতম থাকে ।
· এ চিকিৎসা ফর্সা বা গাঢ় সব রঙের গাত্র বর্ণের রোগীর জন্য
কার্যকর ।
· গাঢ় গাত্রবর্ণের রোগীদের জন্য বিশেষ লেজার রয়েছে । যার
কারণে লেজার এখন সবার জন্য উপলব্ধ পছন্দ হতে পারে । অবশ্য, গাঢ় গাত্র বর্ণের রোগীর ক্ষেত্রে বিশেষ
সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন । কারণ, চুলের পার্শ্ববর্তী ত্বকের মেলানিন লেজার শুষে
নিতে পারে । যার ফলে কাল দাগ অথবা পিগমেন্টের ক্ষতি হতে পারে (ত্বকে সাদা দাগ) ।
·
গড়ে ছয় থেকে আটটি চিকিৎসা সেসনের মাধ্যমেই স্থায়ীভাবে
চুল হ্রাসের ৮০ ভাগ উন্নতি সম্ভব ।
·
যদি কোন রোগী
একটি চলমান চিকিৎসায় থাকা অবস্থায় থাকেন এবং সে অবস্থায় অতিরিক্ত চুলের চিকিৎসা
করান তবে হমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়ার ঝুঁকি থাকে । এর ফলে মিহি চুল খুব
দ্রুতই পুরু হয়ে যেতে পারে । এক্ষেত্রে, চুল হ্রাসের জন্য একটি অথবা দুটি
রক্ষণাবেক্ষণ চিকিৎসা সেসনের প্রয়োজন হতে পারে ।
অস্বাভাবিক চুল বৃদ্ধি একটি অন্তর্নিহিত শারীরিক অবস্থার
সংকেত হতে পারে । তাই সঠিক রোগনির্ণয়ের জন্য একজন ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন
হওয়া উচিত । সৌভাগ্যবশত,
অতিরিক্ত চুলের সমস্যার বহু নিরাপদ এবং কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে । তাই কারও এই অবস্থার
সাথে বসবাস করার কোন কারণ নেই ।
No comments:
Post a Comment