প্রায় সব ধরণের ত্বকেই
অনাকাঙ্ক্ষিত পিগমেন্টেশন, বাদামী দাগ, কালো প্যাচ অথবা ত্বক বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে
। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে । ডার্মাটোলজিতে একে হাইপারপিগমেন্টেশন হিসেবে
চিহ্নিত করা হয় । সৌভাগ্যক্রমে, ডার্মাটোকজিস্টেরা ত্বক-লঘূকরণ পদ্ধতি নিয়ে বহু
গবেষণা করেছেন এবং আশাব্যাঞ্জক চিকিৎসার উন্নয়ন করেছেন । রোগীর ত্বকের টোন যাচাই
করে, পিগমেন্টেশন সমস্যার প্রবলতা এবং ব্যাপ্তির উপর নির্ভর করে একজন
ডার্মাটোলজিস্ট রোগীর জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারেন । আর চিকিৎসা একটি
থেরাপি বা একাধিক থেরাপি সেশনের সমন্বয়ে হতে পারে ।
ফর্সা ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশনের কারণ ও সমাধান
সান ড্যামেজই হছে ফর্সা
ত্বকের ব্যক্তিদের পাইপারপিগমেন্টেশনের প্রধানতম কারণ । বছরের পর বছর সূর্যের আলতে
উন্মুক্ত থাকার ফলে ত্বকে স্পট যুক্ত হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে । এটি এমন
একটি অবস্থা যখন পিগমেন্টেশনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে ত্বক বেমানান রঙ অথবা
বিবর্ণ রূপ ধারণ করে । রোগীর কমপ্লেক্সন এবং তার দীর্ঘকালীন সূর্যালোকে উন্মুক্ত
থাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করে সান ড্যামেজের ব্যাপ্তি পরিমাপ করা যায় । সান
ড্যামেজের ফলে ফর্সা ত্বকে ঘটা পিগমেন্টেশনের সমস্যাগুলোর চিকিৎসাঃ
- সান ড্যামেজের ফলে কালো দাগগুলো প্রাথমিক অবস্থায় অগভীর এবং ত্বকের উপরের স্তরেই দেখা দেয় । ডার্মাটোলজিস্টরা এর চিকিৎসার জন্য সাধারণত টপিকাল হাইড্রোকুইনান অথবা রেটিনল ব্যবহারের পরামর্শ দেন ।
- ত্বকের নির্দিষ্ট দাগ দূর করতে টপিকাল থেরাপির সাথে সাথে ইনটেনসড পালসড লাইট (আইপিএল) ডিভাইজ এবং কিউ-সুইচড লেজার সম্মিলিত বা আলাদাভাবে ব্যবহার করা যায় । তবে আইপিএল এবং কিউ-সুইচড লেজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়া উচিত ।
- প্রতিদিন সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির(ইউভিএ,ইউভিবি) থেকে রক্ষার জন্য সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর (এসপিএফ) ৩০ বা এর অধিক এসপিএফ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা অতি গুরুত্বপূর্ণ ।
গাঢ় রঙের ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশনের কারণ ও সমাধান
গাঢ় ত্বকের অধিকারীদের ক্ষেত্রে যে দুটি
পিগমেন্টেশন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তারা হলো মেলাসমা এবং পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি
হাইপারপিগমেন্টেশন (পিআইএইচ) । ত্বকের নির্দিষ্টঅংশ সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকলে
তাতে বেমানান বাদামী বিবর্ণতা দেখা দেয় । এই বিবর্ণতাই হচ্ছে মেলাসমা । ত্বকের
গভীর কোন স্তরও আক্রান্ত হতে পারে । সেক্ষেত্রে মেলাসমার চিকিৎসা কঠিন হয়ে পরে ।
তখন বহুমুখী চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয় ।
পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি হাইপারপিগমেন্টেশন
(পিআইএইচ) হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন ত্বকের কোন ক্ষতি হয় বা ত্বকের প্রদাহের ফলে
পিগমেন্টেশনের উৎপাদন বেড়ে যায় । পিআইএইচ গাঢ় ত্বকের অধিকারীদের হতে পারে এবং
মেলাসমার মত এরও চিকিৎসা কঠিন হয়ে পরে যদি তা ত্বকের গভীর স্তরের সাথে সম্পর্কিত
হয় । পিআইএইচ এর সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে ব্রণ । কিন্তু তা সোরিয়াসিস, কোন আঘাত বা আগুনে দগ্ধ হওার
ফলেও হতে পারে ।
পিগমেন্টেশন সমস্যার পেছনের কারণগুলো
খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ । যেমন, ব্রণের ফলে তৈরি পিআইএইচ এর চিকিৎসায় টপিকাল
রেটিনয়েডস ব্যবহার করলে উভয় সমস্যার জন্য তা কাজ করে । এসব ঔষধ প্রেসক্রিপশনের
মাধ্যমে পাওয়া যায় এবং একই রকম আরও ঔষধগুলো হচ্ছে ট্রেটিনয়েন, অ্যাডাপালেন ও
টাজারটেন ।
মেলাসমা অথবা
পোস্ট-ইনফ্লেমেটরই হাইপারপিগমেন্টেশনে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিম্নলিখিত থেরাপিগুলোর
মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেনঃ
- সয় অথবা নিয়াসিনিমাইড এর মত উপাদানসমৃদ্ধ ওভার-দি-কাউন্টার টপিকাল পণ্য ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার নজির দেখা গেছে । আর তা দৈনিক ব্যবহার করা যায় ।
- মেলাসমার চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রধান অবলম্বন হচ্ছে হাইড্রোকুইনান থেরাপি ।
- গাঢ় রঙের ত্বকের যারা ওভার-দি-কাউন্টার থেরাপি প্রতিরোধী তারা টপিকাল থেরাপির পাশাপাশি মাইক্রোডার্মাব্রাসিওন অথবা কেমিক্যাল পিলস(খোসা) ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী ।
- ফর্সা ত্বকের ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত কেমিক্যাল পিলস(খোসা) এর তুলনায় উচ্চ ঘনত্বের এবং সক্রিয় উপাদান ব্যবহার করলে, উপাদানগুলো ত্বকের আরও গভীরের পৌঁছাতে পারে এবং আক্রান্ত পিগমেন্টে কাজ করতে পারে । বর্তমান সময়ে সালিসাইলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, রেসরসিনল, কজিক অ্যাসিড, ম্যানডেলিক অ্যাসিড এবং ট্রেটিনয়েন এর মত সক্রিয় উপাদানসমূহ গাঢ় ত্বকের ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে ।
- কঠিন এবং প্রতিরোধী কেসগুলোর ক্ষেত্রে নন-অ্যাব্লেটিভ ফ্র্যাকশনড লেজার এবং খুব নিচু স্তরের কিউ-সুইচড এনডিঃওয়াইএজি লেজার ব্যবহার করা যায় ।
- ত্বকের যাতে আরও ক্ষতি না হয় তার জন্য এসপিএফ ৩০ বা এর অধিক এসপিএফ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন দৈনিক ব্যবহার করতে হবে ।
ত্বকের
বিবর্ণতার মত সমস্যার সমাধানে নতুন নতুন থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে এবং তা ভবিষ্যতে
চিকিৎসার কাজে ব্যবহার হবে । যদিও কেমিক্যাল পিলস (খোসা) এবং লেজার গাঢ় ত্বকের
ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায় তবে আক্রমণাত্মক সংমিশ্রণ থেরাপির
ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উচ্চ ঝুঁকি থেকে যায় । এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে কারণ ত্বকের যেকোনো রকমের আঘাতের ফলে আরও পোস্ট-ইনফ্লেমেটরি
হাইপারপিগমেন্টেশন দেখা দিতে পারে ।
No comments:
Post a Comment