Wednesday 29 March 2017

তিল

আমাদের মা-বাবার কাছ থেকে পাওয়া জেনেটিক উত্তরাধিকার এবং এর সাথে সাথে সূর্যের আলোতে উন্মুক্ততাই (বিশেষ করে শৈশবে ) হচ্ছে শরীরে তিল হবার প্রধান কারণ । একই সাথে এসব কারণের উপর ভিত্তি করেই শরীরে তিলের সংখ্যা ও পরিমাণ নির্ধারিত হয় । সূর্যের আলোতে বেশি উন্মুক্ত ত্বকে তিল বেশি হতে দেখা যায় । যদিও সূর্যের আলো থেকে রক্ষা পাওয়া অংশগুলোতেও (যেমন, হাতের তালু, পায়ের তালু এবং যৌনাঙ্গ) তিলের দেখা পাওয়া যায় ।
তিল এবং ছুলী (চিকিৎসাশাস্ত্রে এফেলাইডস নামে পরিচিত) উভয়ই উৎপত্তি স্থলের পার্শ্ববর্তী ত্বকের চেয়ে গাঢ় হয়ে থাকে । তিল কখনো কখনো উঁচু বা সম্পূর্ণরূপে সমতল হয়ে থাকে, যদিও ছুলী সবসময় সমতল হয় । ছুলী হচ্ছে সান স্পট (চিকিৎসাশাস্ত্রে লেন্টিজিনস নামে পরিচিত) তৈরি হয়ে থাকে মেলানিন নামক গাঢ় পিগমেন্টের বৃদ্ধির কারণে । ছুলী আক্রান্তদের মধ্যে বেশি তিল হবার প্রবণতা দেখা যায় । রৌদ্রের কারণে ত্বক তামাটে রঙ ধারণ করাই মূলত ছুলী, এরা কিঞ্চিত লালচে, অথবা হালকা-বাদামী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা দেয় । সূর্যের তীব্র আলো এড়িয়ে চলা এবং সূর্যের তীব্র আলোর বিরুদ্ধে রক্ষা ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে, নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহারের ফলে তিল এবং ছুলী প্রতিরোধ সম্ভব ।

সকল জাতির (ককেসিয়ান, এশিয়ান, আফ্রিকান এবং ভারতীয়) এবং বর্ণের মানুষের মধ্যেই তিলের দেখা পাওয়া যায় । মানুষ ছাড়াও প্রাণিজগতে তিলর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে ।
প্রাপ্ত বয়সেও কি তিল তৈরি হয়?
যদিও জীবনের প্রথম বছরগুলোতেই বেশিরভাগ তিল দৃশ্যমান হয়ে যায়, মোট তিলের সংখ্যা পূর্ণতা পায় জীবনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশক থেকে গড়পড়তা ৩৫ বছরের মধ্যে । বেশিরভাগ মানুষ ৩০ বছরের পর আর কোন নতুন তিলের দেখা পান না । প্রাপ্তবয়স্করা প্রায়শই তিল না যেমন, ছুলী, লেন্টিজিনস, লিভার স্পট এবং সেবোরিক কেরাটোসেস এর মত দাগের দেখা পান পরবর্তী জীবনে ।
৩৫ বছরের পর নতুন শরীরে নতুন তিল দৃশ্যমান হলে তার পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসাগত মূল্যায়ন এবং সম্ভবত বায়োপ্সি করার প্রয়োজন । প্রাপ্ত বয়সে একটি নতুন তিল সম্ভবত কোন অস্বাভাবিক তিল গঠনের লক্ষণ বা প্রাথমিক মেলানোমা । এ অবস্থায় একজন ডার্মাটোলজিস্ট দ্বারা নতুন অথবা পরিবর্তনশীল তিলের পরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত ।
এছাড়া আর কি হতে পারে?
বহু রকমের মোল(তিল) সিমুলেটর রয়েছে, যেমন, ছুলী, লেন্টিজিনস, লিভার স্পট, সেবোরিক কেরাটোসেস, মেলানোমাস, নিউরোফিব্রমাস, হেমানজিওমাস, স্কিন ট্যাগ, ক্যাফে আউ লাইট মাকুলস এবং পিগমেন্টেড বাসেল সেল ক্যান্সার । এদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে একজন ডার্মাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা । এ সময় হয়তো স্কিন বায়োপ্সি করার প্রয়োজন হতে পারে । ত্বকের এরকম অস্বাভাবিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বায়োপ্সি খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে ।
মেলানোমা
এই বিপদজনক স্কিন ক্যান্সার তরুণদের মধ্যেও তাদের শরীরের যেসব অংশ সূর্যের আলোতে উন্মুক্ত থাকে বা থাকে না এমন সব স্থানেও দেখা দিতে পারে । যদিও মেলানোমার সঠিক কারণ অজানা, জেনেটিক্স এবং অতিবেগুনী রশ্মি এখেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে । পূর্বকালীন কোন তিল বা পিগমেন্টেড স্পট থেকে মেলানোমার উৎপত্তি হতে পারে । তাছাড়া, কোন ধরণের দৃশ্যমান তিলের অবস্থান ছাড়াও মেলানোমা দেখা দেয় । স্বাস্থ্যকর (নন-ক্যান্সারাস) তিলের তুলনায় মেলানোমা আকারে বড়, গাঢ়, অনিয়মিত রঙ এবং গঠনের হয় ।
প্রতিরোধ
যেহেতু আমাদের জিনেটিক্স আমরা পরিবর্তন করতে পারব না, তাই সব ধরণের তিল প্রতিরোধ সম্ভব নয় । নিম্নলিখিত প্রতিরোধ ব্যাবস্থা মূলত সূর্যের ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা পাবার উপায় ।
  • এসপিএফ (সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর) ৫০ এর অধিক সানস্ক্রিন ব্যবহার ।
  • ৬ ইঞ্চি বা তার অধিক ব্যপ্তির হ্যাট (টুপি) ব্যবহার ।
  • সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষাকারী কাপড় পরিধান ( শার্ট, লম্বা হাতা, লম্বা প্যান্ট) ।
  • যে সময় (সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা) সূর্যের প্রবল থাকে তখন ছায়ায় থাকা ।
  • ছায়া এবং বাড়ির ভেতর অবস্থান করা ।
ইতিমধ্যে দৃশ্যমান তিল দূর করার চেয়ে তা দেখা দেয়ার পূর্বেই প্রতিহত করা উচিত । তিল অপসারণের ফলে পূর্বের তিলের স্থানে একটু ক্ষত চিহ্ন তৈরি হয় । ক্ষুদ্রতর তিল সহজে অপসারণ করা যায় । আর বৃহত্তর তিল অপসারণের ফলে প্রায়শই কদাকার দাগের সৃষ্টি করে । কিছু দেশে হয়তো লেজার ব্যবহারের মাধ্যমে তিল অপসারণ করা হয় তবুও লেজার চিকিৎসা তিল অপসারণের জন্য পরামর্শ দেয়া হয় না । অনিয়মিত তিল সার্জারির মাধ্যমেই অপসারণ করা হয় এবং অপসারিত টিস্যু প্রায়শই পরিক্ষার জন্য পাঠান হয় । আর যেহেতু সান স্পট বা লেন্টিজিনস ব্লিচিং বা ফেডিং ক্রিম, লেজার, ইনটেনসড পালসড লাইটে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে, তাই ট্রু মেলানোসাইটিক নেভিকে এসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা উচিত নয় ।

No comments:

Post a Comment