সঠিক উপায়ে করা হলে কান ফুঁড়ান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরাপদ । কিন্তু তা যদি সঠিক
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে না করা হয় তবে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থেকে যায় । তাই
এক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ এবং পেশাদারী কারও সাহায্য নেয়া উচিত । যদিও, সব
রকমের নিরাপত্তামূলক ব্যাবস্থা নেয়া সত্তেও কেউ কেউ ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে
পারেন । যদি আপনি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন তবে ভয় পাবেন না । ইনফেকশনে
আক্রান্ত অংশটি সব সময় পরিষ্কার রাখুন এবং নির্দেশিত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করুন । তারপর শীঘ্রই উন্নতি লক্ষ্য করবেন।
ইনফেকশন চিকিৎসা করার জন্য প্রথমে তা চিনতে পারা জরুরী । তাই কান ফুঁড়ানোর
ফলে সৃষ্ট ইনফেকশন চিকিৎসার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে কিভাবে
তা চেনা যায় এবং কি কি কারনে ইনফেকশন ত্বরান্বিত হয় তা জানা প্রয়োজন ।
কানের ত্বক ভেদ করে এবং ক্ষত সৃষ্টির মাধ্যমেই কারন ফুঁড়ানো হয় । প্রকৃত অর্থে,
কান ফুঁড়ানো একটি খোলা ক্ষত ছাড়া আর কিছুই নয় । তাই কান ফুঁড়ানোর কয়েক
ঘণ্টার মধ্যে ফুলে যাওয়া, হালকা লালচে ভাব, ব্যাথা, চুলকানি অনুভত হওয়া
স্বাভাবিক । যাহোক, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষতটি পরিষ্কার, গন্ধহীন এবং ব্যাথামুক্ত
হয়ে যাওয়া উচিত । কারণ এভাবেই আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে ।
ইনফেকশনের উপসর্গ ও লক্ষন
ফুঁড়ানোর ফলে সৃষ্ট ক্ষতের স্ফীতি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়া ।
ক্ষত থেকে হলুদ, সবুজ অথবা ঘন বাদামী পুঁজ নিঃসরিত হবে ।
লালচে ভাব এবং/অথবা সংবেদনশীলতা ।
চুলকানি ।
অল্প জ্বর ( যদি জ্বর তীব্র হয়, তবে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে
হবে ) ।
ফুঁড়ানোর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রদাহ দেখা দেবে ।
খারাপ গন্ধ ।
জ্বালাপোড়া অনুভূতি দেখা দেবে ।
অতিরিক্ত রক্তপাত ।
ত্বকের রঙ পরিবর্তন, সাধারণত তা কালো হয়ে যায় ।
যদি কান ফুঁড়ানোর দুই দিনের মধ্যে এমন উপসর্গ লক্ষ্য করেন তবে আপনার
চিকিৎসার প্রয়োজন । এসব উপসর্গকে এড়িয়ে যাবেন না বা ইনফেকশন নিজে থেকে
সেরে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকারমূলক
ব্যবস্থার মাধ্যমেই ইনফেকশনের চিকিৎসা সম্ভব । কিন্তু সময় মত প্রতিকারমূলক
ব্যবস্থা না নিলে এই অবস্থা গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে ।
ইনফেকশনের কারণসমূহ
বিভিন্ন কারনে এই ইনফেকশন হয়ে থাকতে পারে । সবচেয়ে লক্ষণীয় কারণসমূহ
নিম্নরূপঃ
নির্বীজিত উপকরণ যেমন সূচ, গ্লাভস ব্যবহার ।
অ্যালার্জিক সস্তা মানের ইয়াররিং ব্যবহার ।
নন ডিসপোজেবল গানের ব্যবহার ।
অনভিজ্ঞ কারও দ্বারা কার্যসম্পাদনের ফলে ।
অপরিষ্কার হাতে ফুঁড়ান স্থানে স্পর্শ করলে ।
বিশেষ কোন ধরণের ধাতুর প্রতি অ্যালার্জি থাকলে ।
ফুঁড়ানোর সাথে সাথে ক্ষত অঞ্চলে পানি প্রয়োগ ।
ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী (যেমন, তোয়ালে) শেয়ার করা ।
ফুঁড়ানোর পর পর আঁটসাঁট ইয়ার রিং পরিধান ।
ইনফেকশনের চিকিৎসা
ইনফেকশন আক্রান্ত অঞ্চল যথা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখা পরীক্ষিত প্রতিকারমূলক
ব্যবস্থা
শুধু কান ফুঁড়ানো নয় এটি সকল ধরণের ইনফেকশন চিকিৎসার জন্য প্রযোজ্য ।
ইনফেকশন আক্রান্ত অঞ্চল স্পর্শ করার পূর্বে এবং পরে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিন
। কারণ ইনফেকশনের অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে যদি হাত থেকে ব্যাকটেরিয়া
প্রবেশ করে ।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল দ্বারা আদ্র করা সুতির কাপরের সাহায্যে দিনে দুই বার ক্ষত
স্থান পরিষ্কার করুন ।
পরীক্ষিত ঘরোয়া প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা
এমন চুলকানি বা ইনফেক্সনের ক্ষেত্রে পারক্সাইড সমৃদ্ধ কোন ঔষধকে না বলুন ।
যদিও অ্যালকোহল সমৃদ্ধ স্যানিটাইজার ব্যবহারে কোন বাঁধা নেই । এটি খুব ভাল
সংক্রামক শক্তিনাশক । কিন্তু একে মূল প্রতিকার হিসেবে গণ্য করা উচিত হবে না ।
যেহেতু সামুদ্রিক লবণ মাইক্রোবিয়ালরোধী উপাদান সমৃদ্ধ তাই সামুদ্রিক লবণ
সহযোগে চুলকানি বা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার মাধ্যমে উপকার পাওয়া যাবে ।
এছাড়া বিভিন্ন তেল আছে যা মিষ্টি এবং সুখকর সৌরভের চেয়ে বেশি কিছু কাজে আসে ।
ল্যাভেন্ডার অয়েল, টি ট্রি অয়েল, চ্যামোমেইল অয়েল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল এবং
ওরেগানো অয়েল ব্যাক্টেরিয়ারোধী, ইনফেকশনরোধী এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান
সমৃদ্ধ । তাই এদের বিকল্প প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা ১০০%
নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ।
এছাড়া বিভিন্ন তেল আছে যা মিষ্টি এবং সুখকর সৌরভের চেয়ে বেশি কিছু কাজে আসে ।
ল্যাভেন্ডার অয়েল, টি ট্রি অয়েল, চ্যামোমেইল অয়েল, ইউক্যালিপ্টাস অয়েল এবং
ওরেগানো অয়েল ব্যাক্টেরিয়ারোধী, ইনফেকশনরোধী এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান
সমৃদ্ধ । তাই এদের বিকল্প প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহার করা ১০০%
নিরাপদ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ।
বেঞ্জালকনিয়াম ক্লোরাইড সলিউসন
বেঞ্জালকনিয়াম ক্লোরাইড একটি অতি পরিচিত সাময়িক অ্যান্টিসেপ্টিক সলিউসন যা
কিনা ইনফেকশন রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে । সাধারণত সামান্য কাঁটা-ছেঁড়া, ক্ষত,
প্রদাহের জন্য একে নির্দেশ করা হয় ।
নিওসপোরিন অইন্মেন্ট
নিওসপোরিন একটি কার্যকরী অ্যান্টিবায়টিক ক্রিম যা কিনা ব্যাকটেরিয়াল
ইনফেকশন রোধে ব্যবহার করা হয় । একে ক্ষত, পোড়া, প্রদাহ, ছড়ে যাওয়া এবং
সামান্য ত্বকের ইঞ্জুরির জন্য ব্যাপকভাবে সুপারিশ করা হয় ।
তিন দিন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও যদি ইনফেকশনের অবস্থার
অবনতি ঘটতে থাকে তবে একজন ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । সময় মত
প্রকৃত চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বা বিলম্ব করলে এমন ইনফেকশন
দীর্ঘস্থায়ী রূপ লাভ করতে পারে ।
No comments:
Post a Comment