Saturday 27 May 2017


কোঁচদাদ বা দাদ’কে ডার্মাটোলজির ভাষায় বলা হয় হার্পিস-জস্টার । এটির মূল কারণ ভাইরাস । দাদের কারণ মূলত এই একটি । কারও যদি কখনো জল বসন্ত বা চিকেনপক্স(ভিজেডভি) হয়ে থাকে তবে ভারাইসেলা-জস্টার ভাইরাসের কারণে জীবনের পরবর্তী সময়ে দাদ হতে পারে । জল বসন্ত হবার পর এই ভাইরাসটি সুপ্ত অবস্থায় থাকে যায় ।  তাই এই ভাইরাসটিই হচ্ছে এই  রোগের জন্য দায়ী । যদিও জল বসন্তের পর আবার এই ভাইরাসের সক্রিয় হওয়ার কারণ এখনো অজানা ।

দাদের শিকার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শরীরে ভারাইসেলা-জস্টার ভাইরাস থাকলেই সবাই দাদে আক্রান্ত হয় না । কিন্তু দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যাবস্থার কারণে এবং পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব বয়সের ব্যক্তিরা দাদে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন । যাহোক, এই ভাইরাস যথেচ্ছভাবেই আক্রমণ করে থাকে । প্রকৃত অবস্থায় ২৫ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক এই রোগে আক্রান্ত হন । বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ।
যেহেতু ১৮ মাস থেকে কৈশোরের আগেই জল বসন্তের টীকা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাদে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমে যায় কারণ টীকা গ্রহণের ফলে ভাইরাস দুর্বল হয়ে পরে । ফলে তা জীবনকালের পরবর্তী দশকগুলোতে আর সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে না ।
স্নায়বিক ব্যথা
দাদ ব্যথার উদ্রেক ঘটায় । যা কিনা জল বসন্তের চেয়েও বেশি । যখন জীবনের পরবর্তী সময়ে ভাইরাস আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে তা স্নায়ু তন্তুতে (অ্যাক্সন) ছড়িয়ে পরে যা কিনা শরীরের সংবেদনশীল অংশগুলো থেকে ত্বক পর্যন্ত বিস্তৃত । ভাইরাসটি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ফুসকুড়ি দেখা দেয় । জল বসন্তের তুলনায় দাদের ফলে স্নায়ু তন্ত্র বেশি আক্রান্ত হয় । উপরন্তু, দাদের উপসর্গসমূহ জল বসন্তের তুলনায় অনেক জটিল এবং তীব্র ।
মস্তক সাধারণত দাদে বেশি আক্রান্ত হয় । প্রাথমিক উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে রণন, জ্বালাপোড়া এবং চুলকানি । অবস্থার অবনতির সাথে সাথে জলপূর্ণ ফোসকা এবং ফুসকুড়ি দেখা দেয় । ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে । বেশিরভাগ রোগী সামান্যতম ছোঁয়ায়, বিছানার চাদরের বা কাপড়ের স্পর্শে তীব্র ব্যথার কথা উল্লেখ করে থাকেন । সবচেয়ে খারাপ ক্ষেত্রে আক্রান্ত অঞ্চল দেখলে মনে হয় যে পুড়ে গেছে ।
যদিও দাদ শরীরের যেকোনো অংশে দেখা দিতে পারে । চোখের বা কানের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দাদের উপস্থিতি খুবই বিপদজনক । বয়স্কদের খেত্রে দাদ পোস্টারপেটিক নিউরালজিয়া নামক অবস্থায় রুপান্তিরত হতে পারে । আর এ ক্ষেত্রে দাদ সেরে যাওয়ার সপ্তাহখানেক বা মাসখানেক পর পর্যন্ত ব্যথা অনুভুত হতে পারে । এমন অবস্থা বা অন্যসব পীড়াদায়ক অবস্থার সম্মুখীন হলে একজন অভিজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত ।
চিকিৎসা
দুর্ভাগ্যক্রমে, দাদের কোন নিরাময়যোগ্য ঔষধ নেই । কিন্তু কার্যকরী ব্যথানাশক ঔষধ রয়েছে যা কিন্তা আক্রমণের সময়কাল হ্রাস করতেও সাহায্য করে । অ্যাসিকলোভির, ভ্যালাসাইকলোভির বা ফার্মসাইকলোভির এর মত অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ যত দ্রুত সম্ভব ব্যবহার করা উচিত । এটি তীব্র ব্যথা প্রশমনে এবং ফোসকা সল্প সময়ে শুকিয়ে যেতে সাহায্য করে । অ্যান্টি ভাইরাল ঔষধ গ্রহণের ফলে পোস্টারপেটিক নিউরালজিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ৫০% পর্যন্ত হ্রাস পায় । এছাড়া দাদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি কর্টিকস্টেরয়েড যেমন প্রিডনিসন ব্যবহার করা হয় ।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানসিক চাপের কারণে দাদের ফলে সৃষ্ট ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং বিষণ্ণতা দেখা দিতে করে । খাবার এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যথা এবং মানসিক চাপ হ্রাস করা যায় ।
সম্ভাবনা হ্রাস
দাদ কি প্রতিরোধ করা সম্ভব? একটি টীকা গ্রহণের মাধ্যমে দাদ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করা সম্ভব । যদিও এমন টীকার কিছু অস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেমন, ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ইঞ্জেকশন দেয়া স্থানে লালচেভাব ইত্যাদি । তবে, দাদ হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাসের তুলনায় এসব সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুই নয় ।
দাদের সম্পর্কে আরও কিছু ব্যাপার জেনে নেয়া প্রয়োজন ।
·         জল বসন্ত না হলে কেউ দাদে আক্রান্ত হতে পারেন না ।
·         এটি ছোঁয়াচে নয় । আপনি অন্য কারও থেকে দাদে আক্রান্ত হবেন না ।
দাদ ফুসকুড়িতে ভাইরাস কণা থাকে এবং তা থেকে জল বসন্তের টীকা নেন নি এমন কেউ জল বসন্তের ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন । তার ফলে এমন ব্যক্তির জন্য জল বসনে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় । কিন্তু সাথে সাথেই দাদ হবে না । এই ভাইরাস ছড়াবার জন্য সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শের প্রয়োজন । সৌভাগ্যক্রমে, জীবনকালে একাবারের বেশি কেউ দাদে আক্রান্ত হন না । তবুও দ্বিতীয়বার দাদে আক্রান্ত হওয়া অসম্ভব নয় । তাই প্রতিরধের জন্য টীকা গ্রহণ করুন ।


No comments:

Post a Comment